সোমবার, অক্টোবর ২৮, ২০২৪

|

স্ক্যামারের ভয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছেন প্রবাসীরা

প্রতিনিধি
মাসিক মীরসরাই

নিউইয়র্কে স্ক্যামারের ভয়ে আতঙ্কিত প্রবাসীরা। তারা নিরাপত্তাহীনতা, অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে জীবন যাপন করছেন। যারা স্ক্যামারের হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন, তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকারের ছায়া। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যারা এখনো স্ক্যামিংয়ের শিকার হননি, তারাও ভয়ে আছেন। কখন হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে যান, এই ভয়ে অনেকেই মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করছেন। ইমেইলও চেঞ্জ করছেন। কিন্তু এগুলো পরিবর্তন করেও যে রেহাই পাবেন, সেই নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও মোবাইল ফোনের সেটে ইমেইল খুলছেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও এড়িয়ে চলছেন। বিশেষ করে, এ দেশে যারা নতুন এসেছেন, তারা বেশি ভয়ে আছেন। অনেক কিছু না জানার কারণেই মূলত তারা বেশি ভীত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্ক্যামিংয়ের শিকার এক ভুক্তভোগী জানান, তার দুটি ব্যক্তিগত ও দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়। সেখান থেকে স্ক্যামাররা অর্থ নিয়ে গেছে। পুলিশে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। চারটি হিসাবের অর্থ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হ্যাকাররা তুলে নেওয়ার বিষয়টি তিনি ব্যাংকেও জানান। ব্যাংক দীর্ঘদিন তদন্তের পর তিনি দুটি হিসাবের অর্থ ফেরত পেয়েছেন দুই মাস পর। আবার দুটি ব্যাংক হিসাব হ্যাকিংয়ের অর্থ পান চার মাস পর। এ জন্য তাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে সময় কাটাতে হয়েছে। তিনি জানান, তার মোবাইল ফোন নম্বর হ্যাকিং করেই সব অর্থ নিয়ে গিয়েছিল হ্যাকারররা। তিনি তার নম্বর চেঞ্জ করবেন বলে জানান।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলছে, জ্যামাইকায় গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অনেক মানুষ স্ক্যামিংয়ের শিকার হয়েছেন। তারা ব্যাংকে অভিযোগ করেছেন। প্রথম দিকে যখন এটি হচ্ছিল, তখন বেশির ভাগই বুঝতে পারেননি যে তার মোবাইল নম্বর ক্লোন করে তার অর্থ নেওয়া হচ্ছে। যখন বুঝতে পেরেছেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এদিকে যখন গণহারে এটি হচ্ছিল, তখন মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছিলেন। কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। কারণ এ ধরনের ঘটনায় পুলিশের তেমন কিছু করার নেই। সেখানে সহায়তার জন্য গেলেও বিশেষ সহায়তা করার সুযোগ ছিল না।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক থেকে কারও অর্থ হ্যাকাররা নিয়ে গেলে প্রথমে ব্যাংকেই অভিযোগ দিতে হবে। অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যাংকের ইনভেস্টিগেশন শাখা এর অনুসন্ধান ও তদন্ত করবে। তারপর তারা রিপোর্ট দেবে। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় আসলেই অভিযোগকারীর অর্থ হ্যাকিং হয়েছে, তাহলে ব্যাংক অর্থ ফেরত দেয়। তবে এ ধরনের ঘটনার তদন্ত অত্যন্ত কঠোরভাবে করা হয়। পুলিশের মতোই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করে। তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, কীভাবে হ্যাক হয়েছে এবং কারা হ্যাক করেছে।

সূত্র জানায়, কিছু মানুষের সর্ব অর্থই নিয়ে যায় হ্যাকাররা। অর্থ নিয়ে যাওয়ার হিড়িক পড়েছিল অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে। বেশির ভাগই গেছে মোবাইলের মাধ্যমে। গ্রাহকেরা ব্যাংকে যে মোবাইল নম্বর দিয়েছেন, সেই মোবাইল নম্বরই ক্লোন করে অর্থ হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। ধারণা করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট মোবাইলধারীর পরিচিত কেউই এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এমনও ঘটনা আছে, ব্যাংক থেকে যার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে, ওই ব্যক্তি জানেনও না তার অর্থ চুরি হয়েছে। যখন জেনেছেন তখন ব্যাংকে জানিয়েছেন। সব তদন্ত করার পর দেখা গেছে, তার বাসার সামনে থেকেই এটি করা হয়েছে। তার মানে চোর ওই ব্যক্তিকে ফলো করেছে এবং তিনি যখন বাসায় ছিলেন ওই সময়ে তার বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্ক্যামার, হ্যাকার অথবা চোর তার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ও ফোন ব্যবহার করেই চুরি করেছে। যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন আর ব্যাংকের পক্ষে কোনো কিছুুই করার থাকে না। তবে বাসার সামনে সিসি ক্যামেরা থাকলে কিংবা যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে সিসি ক্যামেরা থাকলে সেখান থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে বোঝা সম্ভব, কে কাজটি করেছে।

সূত্র জানায়, কোনো কোনো সময় তদন্ত করে এমনও মিলেছে, যিনি মালিক তিনিও ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। একটি ঘটনায় দেখা গেছে, তিনি ভিন্ন লোকেশনে গিয়ে তার অর্থ ব্যবহার করেছেন। পাশাপাশি তার কার্ড অন্য মানুষকে দিয়ে ব্যবহার করিয়েছেন। পরে তার অর্থ চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ঘটনার তদন্তে এটি বের হয়েছে যে তার যোগসাজশেই অর্থ চুরি হয়েছে। আবার তিনিই ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ নিতে চেষ্টা করেছেন। এ ধরনের ঘটনায় অর্থ ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, ব্যাংকের তদন্ত শাখার কর্মকর্তারা অনেক ক্ষমতা রাখেন। তারা তদন্তের জন্য সব জায়গা থেকে তথ্য ও নথিপত্র নিতে পারেন। তাদের তদন্ত কাজে সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্টরা তথ্য দিতে বাধ্য। ফলে কারও অর্থ চুরি হয়ে থাকলে এটি অপরাধীদের লোকেশনসহ সবকিছুই বের করা সম্ভব হয়।

সূত্র জানায়, স্ক্যামারদের আতঙ্কে অনেক প্রবাসী ব্যাংকে অর্থ রাখা নিরাপদ মনে করছেন না। তারা অর্থ তুলে ঘরে রাখছেন। আর ঘরে অর্থ রাখলেও যে চুরি হবে না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। ঘর থেকেও টাকা চুরি হতে পারে। টাকা পাহারা দিয়ে রাখাও কঠিন। তাই ভয়ে অনেকে অর্থ বাসায় না রেখে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে স্ক্যামারদের ভয়ে মানুষ দিশেহারা।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

সর্বাধিক পঠিত